সামি আসলাম নিজে ওপেনার। টেস্ট অভিষেকেই দেখেছেন ওপেনিংয়ে বিশ্ব রেকর্ডের কীর্তি। তবে সামি আসলাম তাতে সঙ্গী হতে পারেননি। বরং দেড় দিন ধরে মাঠে দাঁড়িয়ে দেখেছেন দ্বিতীয় ইনিংসে উদ্বোধনী জুটির রেকর্ডটা কীভাবে ভাঙছেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস। ২০১৫ সালে ঘটনাবহুল খুলনা টেস্টে মাত্র এক ইনিংসই খেলার সুযোগ মিলেছিল আসলামের। তাইজুলের শিকার হওয়ার আগে ২০ রান করতে পেরেছিলেন। পরে ঢাকা টেস্টেও সাফল্য পাননি। দুই ইনিংস মিলিয়ে মাত্র ২৭ রান করে ঢাকা ছেড়েছিলেন আসলাম।
বয়স মাত্র ১৯। তাই তাঁর ওপর আস্থা হারায়নি পাকিস্তান। পরের বছরই ইংল্যান্ড সফরের দলে ডাক মিলেছিল। বার্মিংহাম টেস্টে দুই ইনিংসেই অর্ধশতক পেয়েছিলেন, করেছিলেন ১৫২ রান। কদিন পরই দুবাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৯০ রানের এক ইনিংস। সে সময়কার ২০ বছর বয়সী এই ওপেনারকে নিয়ে অনেক আশা ছিল পাকিস্তানের। কিন্তু পথ হারাতে দেরি হয়নি। একসময় দল থেকেই বাদ পড়ে গেলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফরম্যান্স দিয়ে দলে ফেরার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু কাজ হয়নি। এবারও নিউজিল্যান্ড সফরের দলে ডাক পাওয়া হয়নি তাঁর। রাগে–ক্ষোভে তাই যুক্তরাষ্ট্রে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দেশটির হয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বাংলাদেশের বিপক্ষেই ওয়ানডে অভিষেক হয়েছিল আসলামের। ৪৫ রানের একটি চমৎকার ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু তাতে দলের খুব একটা লাভ হয়নি। সেদিন পাকিস্তানের ২৫০ রান ১০ ওভার হাতে রেখেই পার করেছিল বাংলাদেশ। ধবলধোলাইয়ের তিক্ত স্বাদ নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু করা আসলামের ওয়ানডে ক্যারিয়ারটা থেমেছে মাত্র চার ম্যাচে। ইংল্যান্ডেই সর্বশেষ রঙিন পোশাকে খেলেছেন। আর ১৩ টেস্টের ক্যারিয়ার থমকে গেছে ২০১৭ সালে। দুবাইয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হেরে বসা ম্যাচে ৪০ রান করেছিলেন আসলাম। ধবলধোলাই দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট শুরু হয়েছিল। ধবলধোলাই দিয়েই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধ্যায় শেষ হয়েছে তাঁর, অন্তত পাকিস্তানের হয়ে।
বয়স এখনো ২৫ পূর্ণ হয়নি। কিন্তু তিন বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে না পেরেই অস্থির হয়ে উঠেছেন আসলাম। তাই এখনই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা নিশ্চিত করতে দেশ পাল্টাতে চাইছেন। পাক প্যাশন ওয়েবসাইটের দাবি, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেছেন আসলাম। শুধু থাকা আর যাওয়ার ব্যবস্থা করতে যে সময় লাগছে, সেটা শেষ হলেই চলে যাবেন। এরপরই এই বাঁহাতি যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দলে ঢোকার পথে যাত্রা শুরু করবেন। লক্ষ্য, ২০২৩ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের দলে জায়গা করে নেওয়া।
এশিয়ার অনেক ক্রিকেটারই এখন এই পথে হাঁটছেন, বিশেষ করে পাকিস্তানিরা। যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে সাধারণত তিন বছর খেললেই দেশটির জাতীয় দলে ঢোকার সুযোগ মেলে। আর ২০২৩ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বের আগে দলটিতে ঢুকতে চাইলে তাই এখনই সময় সেখানে গিয়ে ক্রিকেট খেলার। আসলামও সে পথেই হাঁটতে চান। সর্বশেষ কায়েদে আজম ট্রফিতেও বেলুচিস্তানের হয়ে খেলেছেন আসলাম। গত মৌসুমে দক্ষিণ পাঞ্জাব দলকে নেতৃত্বও দিয়েছেন। কিন্তু কোচের কথা না মানায় তাঁকে সে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। এবার জাতীয় টি-টোয়েন্টি কাপের বেলুচিস্তানে দলে জায়গা হয়নি তাঁর। দ্বিতীয় দলে নাম ওঠায় নিজেই নাম প্রত্যাহার করে নেন।
গত মৌসুমে কায়েদে আজমে একপর্যায়ে সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন। কিন্তু পরে সে ধার হারিয়েছেন। তবু নিউজিল্যান্ড সফরের দলে নিজেকে কীভাবে দেখার আশা করেছিলেন আসলাম, সেটা জানা যায়নি। এখন পর্যন্ত যা ইঙ্গিত তাতে পাকিস্তানের হয়ে আন্তর্জাতিক অধ্যায়টা তাঁর টেস্টে ৭৫৮ ও ওয়ানডেতে ৭৮ রানেই থেমে যাচ্ছে।