চলতি বছর পানিতে ডুবে মারা গেছে ৪৪৮ জন

২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ২৫০টি ঘটনায় ৪৪৮ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা গেছেন। এদের মধ্যে ৩১৭ জনের বয়স ৯ বছরের কম। মারা যাওয়াদের মধ্যে ১৬৯ জন নারী বা কন্যাশিশু রয়েছেন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে আগস্ট মাসে।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যম ও উন্নয়ন যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’ পরিচালিত এক বিশ্লেষণে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সংগঠনটি আয়োজিত সাংবাদিকদের এক অবহিতকরণ কর্মশালায় এ তথ্য জানানো হয়। কর্মশালায় জাতীয় পর্যায়ের বিভিন্ন গণমাধ্যমের ২০ জন সাংবাদিক অংশগ্রহণ করেন। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতা সংস্থা গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের সহযোগিতায় কর্মশালাটি আয়োজন করা হয়।

কর্মশালায় আরও জানানো হয়, শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধকে বৈশ্বিকভাবে এসডিজির অন্তর্ভুক্ত করা হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুকে অগ্রাধিকার তালিকাভুক্ত করা হয়নি। ফলে অসুস্থতাজনিত কারণে শিশু মৃত্যুর হার কমানো সম্ভব হলেও পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার প্রতিরোধে কর্মসূচি গ্রহণ না করা হলে, সার্বিকভাবে শিশুমৃত্যুর উচ্চহার থেকে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

পানিতে ডুবে মৃত্যু সারা বিশ্বে আঘাতজনিত কারণে শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী প্রতিবছর তিন লাখ ৫৯ হাজার ৪০০ জন ব্যক্তি পানিতে ডুবে মারা যায়। এদের ২০ শতাংশের বয়স পাঁচ বছরের কম। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর হারে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম। বাংলাদেশে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের মোট মৃত্যুর ৪৩ শতাংশের জন্য দায়ী পানিতে ডুবে যাওয়া। ২০১৬ সালে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস, জন হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, দি সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বা সিআইপিআরবি এবং আইসিডিডিআর’বি পরিচালিত গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে গড়ে প্রতিদিন ৪০টি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। এর মধ্যে ৩০টি শিশুর বয়স পাঁচ বছরের কম।

কর্মশালায় বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) পরিচালক ড. আমিনুর রহমান জানান, এত শিশুর মৃত্যু সত্বেও বিষয়টি পরিকল্পনা ও নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ে অগ্রাধিকার তালিকায় জায়গা করে নিতে পারেনি। ফলে এ নিয়ে সরকারি পর্যায়ে বা জাতীয়ভাবে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেই।

তিনি জানান, সিআইপিআরবি ২০০৫ সাল থেকে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর স্থানীয় ব্যবস্থা উন্নয়নে কাজ করে আসছে। এতে দেখা গেছে, দারিদ্র্য, অসচেতনতা ও প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের অভাবের কারণে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। বাংলাদেশে শিশুরা পানিতে ডুবছে বাড়ির ২০ গজের মধ্যে এবং মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটছে মূলত সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে। এসময়ে মা-বাবা, বড় ভাই-বোন বা পরিচর্যাকারীরা অন্য কাজে ব্যস্ত থাকেন। এছাড়াও উদ্বেগের বিষয় হলো বাড়ির আশেপাশের ডোবা-নালা-পুকুর-খাল-বিল সবকিছু উন্মুক্ত। শিশুরা অন্যদের অলক্ষ্যে অবাধে জলাশয়ে চলে যায় এবং দুর্ঘটনার শিকার হয়।

সাম্প্রতিক এক গবেষণা প্রতিবেদনের বরাতে তিনি বলেন, দিনের প্রথমভাগে শিশুদের নিবিড় তত্ত্বাবধানে রাখা হলে বাংলাদেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার ৭০ শতাংশ রোধ করা সম্ভব। এক্ষেত্রে গ্রামভিত্তিক শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র সফলভাবে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুরোধে কার্যকর। পাশাপাশি এ গ্রামভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্যও সহায়ক। এ ধরনের দিবাযত্নের ব্যবস্থা বাংলাদেশের মতো অন্যান্য নিন্ম ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার দূর করতে বিশেষ অবদান রাখতে পারে।

If you like the post, share it and give others a chance to read it.

নগর২৪

nogor24 বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি ব্লগসাইট। এই সাইটের লক্ষ্য হল বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সহজে বোধগম্য এবং সঠিক খবর এবং তথ্য প্রদান করা।