যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেন একদিকে ঘর গোছানো শুরু করেছেন, অন্যদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফের নাম ঘোষণা করেছে বাইডেন শিবির। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনো নির্বাচনে নিজের পরাজয় মেনে নেননি। এরই মধ্যে নির্বাচনের এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। জো বাইডেন ট্রাম্পের ফোন পর্যন্ত পাননি। ট্রাম্প পরাজয় মানবেন কি না, সে কথা উঠতে শুরু করেছে।
ট্রাম্পের গতিবিধি সম্পর্কে কেউ আগাম অনুমান করতে পারছেন না। গতকাল বুধবার ট্রাম্প তাঁর শীর্ষ নির্বাচনী উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
জো বাইডেন হোয়াইট হাউসের চিফ অব স্টাফ হিসেবে তাঁর দীর্ঘদিনের পরিচিত রন ক্লেইনের নাম ঘোষণা করেছেন। আল গোরের চিফ অব স্টাফ হিসেবে কাজ করেছেন ক্লেইন। হার্ভার্ড স্নাতক ক্লেইন ওয়াশিংটনের রাজনীতির শীর্ষ পর্যায়ের অনেকের ঘনিষ্ঠ কুশীলব হিসেবে পরিচিত। নিয়োগ ঘোষণার পর রন একে অত্যন্ত সম্মানের বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, নতুন প্রশাসনে যোগ দিয়ে আমেরিকাকে ঐক্যবদ্ধ করার যে প্রয়াসের কথা জো বাইডেন বলেছেন, তা এগিয়ে নিতে তিনি ভূমিকা রাখতে পারবেন বলে বিশ্বাস করেন।
তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য নির্বাচনে জয়-পরাজয়ই শেষ কথা নয়, তাঁর জন্য দুঃসংবাদ তাড়া করছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে বেশ কিছু মামলা মোকাবিলা করতে হবে। এর মধ্যে বেশ কিছু সিভিল মামলার সঙ্গে অপরাধজনিত মামলাও রয়েছে। ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে পাওয়া আইনি সুবিধা হারানোর পর ট্রাম্পের নাজুক ভবিষ্যৎ নিয়ে এর মধ্যেই কথা উঠেছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হচ্ছে ‘ট্রাম্প অর্গানাইজেশন’ নিয়ে নিউইয়র্কের ম্যানহাটন ডিসট্রিক্ট অ্যাটর্নি অফিসের তদন্ত। ব্যক্তি ট্রাম্পের ব্যবসার আড়ালে আর্থিক অব্যবস্থাপনা এবং কর ফাঁকি দেওয়ার তথ্য বেরিয়ে আসতে পারে এ তদন্তে।
২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জন্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা নারীর মুখ বন্ধ করার জন্য অর্থ প্রদানের মামলাটিও জেগে উঠতে পারে। আইনজীবী মাইকেল কোহেনকে দিয়ে নির্বাচনের প্রচার তহবিল থেকে এমন অর্থ দিয়ে অভিযোগ আনা নারীর মুখ বন্ধ করিয়েছিলেন ট্রাম্প। এ মামলার তদন্ত ব্যাপক হতে পারে। ব্যাংক জালিয়াতি, বিমা জালিয়াতি, জালিয়াতি করে কর ফাঁকি দেওয়া, ব্যবসার নথিপত্রে জালিয়াতি নিয়ে তদন্ত বিস্তৃত হবে বলে সংবাদ বেরোচ্ছে।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটন ডিসি এবং ম্যারিল্যান্ডের অ্যাটর্নি জেনারেলরা ব্যক্তিগত স্বার্থে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যবহারের অভিযোগ করে আসছেন। এসব নিয়েও তদন্ত শুরু হবে। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক নারীর ক্ষতিপূরণ মামলাও চাঙা হয়ে উঠবে। এ ছাড়া ট্রাম্পের ভাইয়ের মেয়ে মেরি ট্রাম্পের একটি মামলাও ঝুলে আছে তাঁর বিরুদ্ধে। জালিয়াতি করে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার অভিযোগ করে আসছেন মেরি।
ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হিসেবে নানা আইনি সুবিধা পেয়ে আসছিলেন। তিনি রাষ্ট্রীয় বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ নিজের বিরুদ্ধে আনা আইনি অভিযোগ মোকাবিলার জন্য ব্যবহার করে আসছিলেন। মার্কিন সংবিধানে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্টকে অপরাধ থেকে পূর্ণ দায়মুক্তি দেয় কি না, এ নিয়ে কোনো স্পষ্ট নির্দেশনা নেই। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এমন সুবিধা ব্যবহার করে আসছিলেন।
নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর ক্ষমতা ছাড়ার আগে ট্রাম্প নিজেকে নিজেই ক্ষমা করার নির্দেশনায় স্বাক্ষর করতে পারেন। নিজেকে এমন ক্ষমা করার নির্দেশনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট স্বাক্ষর করতে পারেন কি না, এ নিয়েও সংবিধানে স্পষ্ট নির্দেশনা নেই বা ইতিহাসে এমন কোনো নজিরও নেই।
কোনো কোনো মার্কিন সংবাদমাধ্যমে লেখা হচ্ছে, ২০ জানুয়ারির আগের দিনই ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা থেকে পদত্যাগ করতে পারেন। এ সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবেই মাইক পেন্স ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দায়মুক্তি দিয়ে আদেশে স্বাক্ষর করবেন।
নির্বাচনের পর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রহস্যময় নীরবতার কারণেই নানা কথা ডালপালা মেলছে। সিএনবিসির এ-সংক্রান্ত সংবাদে বলা হয়েছে, নির্বাচনের পর ডোনাল্ড ট্রাম্প দুই দফা শীর্ষ প্রচার উপদেষ্টাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। প্রথম বৈঠকে নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করে মামলাগুলো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়েই আলাপ হয়েছে।
গত বুধবারের সভায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে শীর্ষ উপদেষ্টাদের সভায় ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার, প্রচার ব্যবস্থাপক বিল স্টিফেন এবং উপদেষ্টা জেসন মিলার উপস্থিত ছিলেন।
ট্রাম্প প্রচারঘনিষ্ঠ সূত্রের বরাত দিয়ে সিএনবিসি বলেছে, ট্রাম্প ক্ষমতা ছাড়ার আগে বিজয়ী প্রার্থী জো বাইডেনকে অভিনন্দন না-ও জানাতে পারেন। হোয়াইট হাউস ছাড়ার আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলতে পারেন, ‘আমি নির্বাচনের এ ফলাফলে বিশ্বাস করি না। দেশের স্বার্থে এ ফলাফল নিয়ে আমি লড়াইও করছি না।