মহামারির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির ভয়াবহ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সংহতি ও সহযোগিতার আহ্বান জানালেন জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা।

কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিনগুলোতে প্রবেশাধিকার সার্বজনীন ও সাশ্রয়ী করা, এসডিজির ঘাটতি মোকাবিলায় অর্থায়ন, দারিদ্র্য ও অসমতার ক্রমবর্ধমান ধারার অবসান, অভিবাসী শ্রমিকদের সহযোগিতা দেওয়া, রপ্তানি আয়ের নিম্নগতি রোধ, সবার জন্য ডিজিটালাইজেশনের সুবিধা নিশ্চিত এবং জরুরি জলবায়ু ও জীববৈচিত্র‌্য ইস্যুগুলো মোকাবিলা করার মতো বিষয়ে অগ্রাধিকার দিচ্ছে বাংলাদেশ। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (৮ অক্টোবর) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটির সাধারণ বিতর্ক পর্বে তিনি তার বক্তব্যে এ কথা বলেন।

করোনা মহামারির প্রেক্ষাপটে এ বছর দ্বিতীয় কমিটি সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে- ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী ভালো সময় ফিরিয়ে আনা: আরও ন্যায়সঙ্গত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সৃজন, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠন ও কোভিড থেকে টেকসই পুনরুদ্ধার নিশ্চিত’।

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ বিতর্ক পর্বে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে ‘বৈশ্বিক সম্পদ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছিলেন, সে কথা পুনরুল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা বলেন, ‘কোভিড-১৯ মুক্ত বিশ্বের জন্য আমাদেরকে অবশ্যই ভ্যাকসিনসমূহে সাশ্রয়ী ও বৈশ্বিক প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে’।

উন্নয়নশীল দেশগুলোর উৎপাদনশীল সক্ষমতা বৃদ্ধি, অর্থনীতির বৈচিত্র্যকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সহায়তা প্রদানের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সংকট থেকে উন্নয়নশীল দেশগুলোর টেকসই উত্তরণ নিশ্চিত করতে তাদের গৃহীত প্রচেষ্টাসমূহে অব্যাহতভাবে আর্থিক সহায়তা দেওয়া অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে জি-৭, জি-২০, ওইসিডি, এবং আইএফআই সমূহকে আর্থিক প্রণোদনা, সাশ্রয়ী অর্থায়ন ও ঋণ থেকে অব্যাহতি দানের মতো পদক্ষেপগুলো আরও বাড়ানোর আহ্বান জানান বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। এলডিসি থেকে উত্তরণের পথে থাকা দেশগুলোকে পুনরায় যাতে এলডিসি পর্যায়ে ফিরে যেতে না হয় সেজন্য বিশেষ সহায়তা পদক্ষেপ গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা। উন্নয়নশীল দেশসমূহের রপ্তানি আয়ের ঘাটতি পূরণে এগিয়ে আসতে উন্নত অর্থনীতির দেশসমূহকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পরিপূর্ণ করার আহ্বান জানান তিনি। শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার, কারিগরি সহায়তা এবং অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, ও মধ্যম সারির এন্টারপ্রাইজগুলোতে আরও অর্থায়নের সুযোগ সৃষ্টি করার মাধ্যমে উন্নত অর্থনীতির দেশগুলো  প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি পূরণে এ ঘাটতি মেটাতে পারে মর্মে উল্লেখ করেন বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি।

অভিবাসী কর্মীরা যেসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যাচ্ছে তা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত ফাতিমা এই সংকটে তাদের সহায়তা তেওয়া এবং কোভিড-১৯ পরবর্তী কর্মসংস্থান বাজারে তাদের সন্নিবেশন করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান। উদীয়মান প্রযুক্তিসমূহ এবং ডিজিটাল সেবার সুবিধাগুলো যেন সবাই পেতে পারে তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দেন তিনি। উন্নয়ন অভিযাত্রার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে বাংলাদেশ ডিজিটাল প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনী কৌশলের যে অনুশীলন করে যাচ্ছে, তা সবার সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার প্রস্তাব করেন রাষ্ট্রদূত ফাতিমা।

রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা জলবায়ু ও জীববৈচিত্র‌্য ইস্যুতে বৈশ্বিক সাড়াদানের ঘাটতির বিষয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জরুরি জলবায়ু পরিস্থিতি মোকাবিলায় গঠিত ৪৮টি দেশের সংগঠন ‘ক্লাইমেট ভারনারেবল ফোরাম (সিভিএফ)’ এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ আরও অংশগ্রহণমূলক ও নেতৃত্বশীল ভূমিকা গ্রহণ করবে মর্মে প্রতিশ্রুতির কথা জানান তিনি।

উল্লেখ্য, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও আর্থিক বিষয়াবলী নিয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দ্বিতীয় কমিটি কাজ করে থাকে। প্রতি বছর জাতিসংঘ সদস্যরাষ্ট্রগুলোর অংশগ্রহণে দ্বিতীয় কমিটির এই সাধারণ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়।

If you like the post, share it and give others a chance to read it.

নগর২৪

nogor24 বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি ব্লগসাইট। এই সাইটের লক্ষ্য হল বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সহজে বোধগম্য এবং সঠিক খবর এবং তথ্য প্রদান করা।