ভারত কি বাংলাদেশকে চীনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে?

বিশ্লেষন:-


সম্প্রতি চীন ও ভারতের সীমান্ত বিরোধ চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। চীন যেন কিছুতেই পিছু হটছে না। লাদাখ সীমান্তে তাদের সৈন্য ও সমরাস্ত্রের মজুদ দিন দিন বাড়িয়ে চলেছে। এমনকি বিস্তীর্ণ ভারতীয় ভূখণ্ড দখল করে নিয়েছে, ভারত প্রথমে কিছুটা নমনীয় থাকলেও সম্প্রতিক সময়ে তারাও সীমান্তে তাদের সৈন্য ও যুদ্ধাস্ত্র বাড়িয়েছে, পরিস্থিতি যে একেবারেই মুখোমুখি সে কথা বলাই বাহুল্য।

প্রাথমিক পর্যায়ে ভারতের ভরসা ছিল ১৯৯৬ সালের চীন-ভারত সীমান্ত চুক্তিতে, যেখানে ভারত ও চীন কোন পক্ষই সীমান্তে অস্ত্র কিংবা বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করতে পারবে না। কিন্তু দেখা গেল চীনা সেনারা non-lethal অর্থাৎ ভোঁতা অস্ত্র দিয়েই ২০ জন ভারতীয় সেনাকে হত্যা করে, আর এর মাধ্যমে বিরোধিতার পারদ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

এখন ভারতের স্ট্র্যাটেজি হচ্ছে সামনের ৪ মাস চীনা সেনাদের আগ্রাসন কোন মতো রুখে দেওয়া, এরপর শুরু হবে তুষারপাত, প্রচন্ড শীতে হয়তো চীনা সেনারা ওই অঞ্চল ছেড়ে চলে যাবে, আর তখনই ভারত ঐ অঞ্চল তাদের নিজেদের আয়ত্ত নিবে। কিন্তু সে গুড়ে বালি, স্যাটেলাইটের ছবিতে দেখা যাচ্ছে চীনা সেনারা রীতিমতো ওই অঞ্চলে স্থাপনা নির্মাণ শুরু করে দিয়েছে। ১৯৬২ সালের পর এই প্রথম ভারত ও চীন এত ব্যাপক সীমান্ত বিরোধে জড়িয়ে পড়ল, এই বিরোধের পারদ যে সহজে নামবে না সে কথা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে।

অন্যদিকে দেখা যাচ্ছে ভারতের এই কোণঠাসা পরিস্থিতিতে তার খুব কাছের বন্ধু রাষ্ট্র নেপাল ও ভুটান ভারতের সঙ্গে রীতিমত বৈরী আচরণ করছে। কিছুদিন আগে নেপাল পুলিশ ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকে স্থানীয় ভারতীয়দের বেদম প্রহার করেছে, ভুটান ভারতীয় কৃষকদের পানি বন্ধ করে দিয়েছে। শ্রীলংকা ও মালদ্বীপ অনেক আগ থেকেই ভারতের সঙ্গে নেই। পাকিস্তানের সাথে তো সাপে-নেউলে, বেচারা বাংলাদেশের কুল রাখি না শ্যাম রাখি অবস্থা ।

কথা হচ্ছে, তথাকথিত পরাশক্তি ও স্বল্প সময়ে কল্পিত বিশ্ব অর্থনীতিতে এক নম্বর স্থান দখল করে নিবে যে ভারত তার অবস্থা এত মলিন কেন? কোন একজন প্রতিবেশী আজ ভারতের পাশে নেই। ভারত কি কখনো এই উত্তরগুলো গভীরে যেয়ে খোঁজার চেষ্টা করেছে? প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে শুনেছি তাদের সাউথ ব্লকের থিংক ট্যাংক এর মাথামোটা একটা বিভাগ আছে। সে বিভাগ কি কখনো শোষিত নেপাল কিংবা ভুটানের কান্না, বাংলাদেশীদের পানির কষ্ট সরকারপ্রধানদের কাছে তুলে ধরতে পেরেছে?

উপরন্তু, চীনের সাথে এই সীমান্ত বিরোধের প্রাক্কালে ভারত চীনের কাছে যতটা নাস্তানাবুদ বা মার খাচ্ছে, ঠিক ততটা মারমুখী ও আগ্রাসী ভূমিকা’ চালাচ্ছে সীমান্তে বসবাসরত নিরীহ বাংলাদেশিদের উপর। বিগত ছয় মাসে সীমান্তে অন্তত ২৫ জন সাধারণ মানুষ ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে নিহত হয়েছে, অথচ বাংলাদেশ সরকার এখনও ভারতকে বন্ধু মনে করেন, নেপাল কিংবা ভুটানের মত চোখ এখনও রাঙাইনি ।

তিস্তার পানি নিয়ে বাংলাদেশে চোখ রাঙাতে পারে, অবৈধ ভারতীয়দের বাংলাদেশে চাকরি করা নিয়ে চোখ রাঙাতে পারে, বাণিজ্য বৈষম্য নিয়ে চোখ রাঙাতে পারে, নামমাত্র মূল্যে ট্রানজিটের বিরুদ্ধে চোখ রাঙাতে পারে। বাংলাদেশ সেটা করেনি, এখন দেখা যাচ্ছে বিএসএফ বিনা উস্কানিতে বাংলাদেশ সীমান্তে পাখির মতো নিরীহ বাংলাদেশীদের হত্যা করছে।

তাহলে কি ভারত চাইছে বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে সরাসরি যোগ দিয়ে ভারতের একহাত দেখে নিক? ভারত কি ২০০১ সালের রৌমারী ও পদুয়া ভুলে গেছে? তখনও কিন্তু প্রধানমন্ত্রী ছিল শেখ হাসিনা। শান্ত বিড়ালের কান বার বার না খোঁচানোই ভালো, এতে করে বিড়াল বাঘ হয়ে যেতে পারে।

পরিশেষে বলি ভারতীয় কর্তাব্যক্তিদের শুভ বুদ্ধির উদয় হোক, দুঃসময়ে পাগলও বোঝে কিভাবে তাকে চলতে হবে।


মো: ফেরদৌস রেজা
সাংবাদিক ও সংবাদ বিশ্লেষক

If you like the post, share it and give others a chance to read it.

নগর২৪

nogor24 বাংলাদেশের জনপ্রিয় একটি ব্লগসাইট। এই সাইটের লক্ষ্য হল বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সহজে বোধগম্য এবং সঠিক খবর এবং তথ্য প্রদান করা।